চাঁদের নিচে তারা কি কিয়ামতের আলামত? কোরআন, বিজ্ঞান ও হাদিস কি বলে

চাঁদের নিচে তারা কি কিয়ামতের আলামত? বিজ্ঞান ও হাদিস কি বলে

২৪ মার্চ ২০২৩ দিবাগত রাতে চাঁদের নিচে তারা দেখা গেছে, অনেকেরই প্রশ্ন এটা কি কিয়ামতের আলামত? এমন বিরল দৃশ্য হয়তো এ জীবনে অধিকাংশরাই দেখেননি। কিন্তু কোরআন, হাদিস কিংবা বিজ্ঞান এ ব্যাপারে কি বলছে, চলুন দেখে নেওয়া যাক।

চাঁদের নিচে তারা সম্পর্কে বিজ্ঞান কি বলে

২৪ মার্চ সন্ধ্যায় এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখে অবাক হয়েছে মানুষ। সূর্য ডুবতেই সেই দৃশ্যের সাক্ষী হলো অনেকেই। আকাশে উঠেছে সরু এক চাঁদ। আর তার নিচেই দেখা যাচ্ছে এক আলোর বিন্দু।

এমন দৃশ্য কবে দেখা গেছে, তা মনে করতে পারছেন না অনেকেই। সন্ধ্যা প্রায় ৬টা পর্যন্ত সেই আলোর বিন্দু একেবারে চাঁদের কাছেই অবস্থান করছিল। পরে দেখা যায়, আস্তে আস্তে সেই বিন্দু চাঁদ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তা দেখে এদিন থমকে যান চলতি পথের মানুষ। বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জায়গা থেকেই সেই দৃশ্য দেখা গেছে।

কলকাতার ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি স্পেস অ্যান্ড আর্থ সায়েন্সের ডিরেক্টর দেবী প্রসাদ দুয়ারী জানিয়েছেন, আসলে চাঁদের নিচে যে উজ্জ্বল বিন্দু দেখা যাচ্ছে, তা হলো শুক্রগ্রহ। পৃথিবীর নিরিখে মনে হচ্ছে যেন শুক্রের কাছে চলে এসেছে চাঁদ।

তিনি জানিয়েছেন, এদিন কলকাতার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যে অবস্থানে ছিল শুক্রগ্রহ, তা দেখে মনে হচ্ছিল যেন চাঁদ চাপা দিয়ে দিয়েছে শুক্রকে। তারপর আস্তে আস্তে শুক্রের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে। ফলে দেখে মনে হচ্ছে ওই উজ্জ্বল বিন্দু দূরে চলে যাচ্ছে।

কতদিন বাদে আবার এমন দৃশ্য দেখা যাবে, তা নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন দেবীপ্রসাদ দুয়ারি।

তিনি আরও জানিয়েছেন,নিজের কক্ষপথে চলতে চলতে এভাবে গ্রহ বা নক্ষত্রের অবস্থান বদলায়। এটা তেমনই একটি ঘটনা। তাই আবার কবে দেখা যাবে, তা বলা সম্ভব নয়।

চাঁদের নিচে তারা সম্পর্কে হাদিস কি বলে

নতুন মাসের চাঁদ ওঠার সময় বড় হয়ে উদিত হবে এমনই একটি বিষয় কোরআন এবং হাদিসে উল্লেখিত রয়েছে। মূলত মাসের প্রথম দিন চাঁদ একেবারে চিকন এবং সরু অবস্থায় উঠে থাকে কিন্তু যখন কেয়ামত নিকটবর্তী হবে তখন সে সময়ে চাঁদ প্রথম দিনেই বড় হয়ে উদিত হবে এমনটাই বলা রয়েছে ইসলাম ধর্মে। চাঁদকে দেখে মনে হবে যেন দুই-তিন দিনের চাঁদ। এই নিয়ে আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন–

কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার আলামত হচ্ছে চন্দ্র মোটা হয়ে উদিত হওয়া। বলা হবে এটি দুই দিনের চাঁদ। (তাবরানী। ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদীছ নং- ৫৭৭৪।)

কোরআনে চাঁদ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জায়গায় চাঁদের কথা অবতারণা করেছেন। চাঁদের সৃষ্টি, চাঁদ তার কক্ষপথে চলে, চাঁদকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে—এমন অনেক প্রশ্নের জবাবও কোরআনে কারিমে এসেছে। নিম্নে আমরা চাঁদ বিষয়ে কয়েকটি আয়াত নিয়ে আলোচনা করব।

  • ১. চাঁদ আল্লাহর এক মহান সৃষ্টি। তাই আল্লাহ তাআলা কোরআনে চাঁদকে নিয়ে শপথ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘কখনোই নয়, শপথ চাঁদের।’ (সুরা : মুদ্দাসসির, আয়াত : ৩২)

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘এবং (আমি শপথ করছি) চাঁদের, যখন তা ভরাট হয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করে।’ (সুরা : আল-ইনশিকাক, আয়াত : ১৮)

  • ২. মানুষের স্বভাব, বড় কোনো কিছু দেখলে তার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি বেড়ে যায়। এমনকি তার উপাসনা শুরু করে দেয়। আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে দিয়েছেন যে চাঁদ আল্লাহর একটি সৃষ্টি মাত্র। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁরই নিদর্শনাবলির অন্তর্ভুক্ত হলো রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা কোরো না এবং চন্দ্রকেও না; বরং সিজদা করো আল্লাহকে, যিনি এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, যদি বাস্তবিকই তোমরা তাঁর ইবাদত করে থাকো।’ (সুরা : হা-মিম আস-সিজদাহ, আয়াত : ৩৭)
  • ৩. ঝলমলে চাঁদকে দেখার পর ভাবনার কথা এসেছে কোরআনে। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন সে চাঁদকে উজ্জ্বলরূপে উদিত হতে দেখল তখন বলল, ‘এই আমার রব’। কিন্তু যখন সেটিও ডুবে গেল, তখন বলতে লাগল, আমার রব আমাকে হিদায়াত না দিলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্ট লোকদের দলভুক্ত হয়ে যাব।’ (সুরা : আল-আনআম, আয়াত : ৭৭)
  • ৪. চাঁদ আল্লাহপ্রদত্ত নুর। ইরশাদ হয়েছে, “তিনিই আল্লাহ, যিনি সূর্যকে রশ্মিময় ও চন্দ্রকে জ্যোতিপূর্ণ করেছেন এবং তাঁর (পরিভ্রমণের) জন্য বিভিন্ন ‘মনজিল’ নির্ধারণ করেছেন, যাতে তোমরা বছরের গণনা ও (মাসের) হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এসব যথার্থ উদ্দেশ্য ছাড়া সৃষ্টি করেননি। যেসব লোক জ্ঞান-বুদ্ধি রাখে, তাদের জন্য তিনি এসব নিদর্শন সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন।” (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৫)
  • ৫. চাঁদের মাধ্যমে মানুষ হিসাব করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘(তিনিই) ভোরের উদঘাটক। তিনিই রাতকে বানিয়েছেন বিশ্রামের সময় এবং সূর্য ও চন্দ্রকে করেছেন এক হিসাবের অনুবর্তী। এসব মহাপরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ সত্তার পরিকল্পনা।’ (সুরা : আল-আনআম, আয়াত : ৯৬)

অর্থাৎ এ সব কিছুতে তিনি স্বীয় প্রভুত্ব বিকাশ করেছেন এবং বান্দার উপকারও এর মধ্যে নিহিত রেখেছেন, যথা—বছরসমূহের পরিগণনা প্রত্যেক কিছুর মেয়াদ হিসাব করা চন্দ্র-সূর্যের ওপর নির্ভর করে হয়।

  • ৬. চাঁদ-সুরুজ সৃষ্টি করে তিনি তাদের ছেড়ে দেননি, বরং তারই আজ্ঞাধীন করে রেখেছেন। যেগুলো সর্বদা মানুষের সেবায় নিয়োজিত। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক সেই আল্লাহ, যিনি সব আসমান ও জমিন ছয় দিনে সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি আরশে ইস্তিওয়া গ্রহণ করেন। তিনি দিনকে রাতের দ্বারা ঢেকে দেন, যা দ্রুতগতিতে ধাবিত হয়ে তাকে ধরে ফেলে। এবং সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজি (সৃষ্টি করেছেন), যা সবই তাঁরই আজ্ঞাধীন। স্মরণ রেখো, সৃষ্টি ও আদেশ দান তাঁরই কাজ। আল্লাহ অতি বরকতময়, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক।’ (সুরা : আল-আরাফ, আয়াত : ৫৪)

অন্য আয়াতে বলেন, ‘তিনি দিন-রাত ও চন্দ্র-সূর্যকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। নক্ষত্ররাজিও তাঁর নির্দেশে কর্মরত আছে। নিশ্চয়ই এর ভেতর বহু নিদর্শন আছে সেসব লোকের জন্য, যারা বুদ্ধি কাজে লাগায়।’ (সুরা : আন-নাহল, আয়াত : ১২)

  • ৭. চাঁদ সব সময় ঘূর্ণায়মান থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের কাজে নিয়োজিত করেছেন, যা অবিরাম পরিভ্রমণরত আছে। আর তোমাদের জন্য রাত ও দিনকেও কাজে লাগিয়ে রেখেছেন।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৩)
  • ৮. চাঁদ আল্লাহর জন্য সিজদা করে থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি দেখোনি আল্লাহর সম্মুখে সিজদা করে যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে, যা-কিছু আছে পৃথিবীতে এবং সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পাহাড়, বৃক্ষ, জীবজন্তু ও বহু মানুষ? আবার এমনও অনেক আছে, যাদের প্রতি শাস্তি অবধারিত হয়ে আছে। আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন তার কোনো সম্মানদাতা নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ করেন যা তিনি চান।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ১৮)
  • ৯. চাঁদ নির্দিষ্ট কক্ষপথে চলে। এর মধ্যে কোনো ধরনের ব্যত্যয় হয় না। ইরশাদ হয়েছে, ‘চাঁদের উদয় এবং অস্তের নির্দিষ্ট সময় রয়েছে এরপর তার এই পরিক্রমণ বন্ধ হয়ে যায়। তুমি দেখোনি আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে প্রবিষ্ট করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করান এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিয়োজিত করে রেখেছেন, প্রত্যেকটি নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বিচরণশীল এবং (তুমি কি জানো না) আল্লাহ তোমরা যা কিছু করছ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত?’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ২৯)
  • ১০. চাঁদ তার কক্ষপথে সাঁতার কাটে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং তিনিই সেই সত্তা, যিনি রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকেই কোনো না কোনো কক্ষপথে সাঁতার কাটছে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩৩)
  • ১১. সূর্যের নির্দিষ্ট কক্ষপথ রয়েছে সে কখনো চাঁদকে ধরতে পারবে। আল্লাহ বলেন, ‘সূর্য নাগাল পায় না চাঁদের আর রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা। প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৪০)
  • ১২. চাঁদের অনেক মঞ্জিল রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর চাঁদের জন্য আমি নির্দিষ্ট করে দিয়েছি বিভিন্ন মনজিল। পরিশেষে তা (নিজ মনজিল অতিক্রম করে) ফিরে আসে পুরনো খেজুর ডালার মতো (সরু হয়ে)।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৩৯)
  • ১৩. চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়া সম্ভব। ইরশাদ হয়েছে, ‘কিয়ামত কাছে এসে গেছে এবং চাঁদ ফেটে গেছে।’ (সুরা : আল-কামার, আয়াত : ১)
  • ১৪. স্বপ্নে চাঁদকে সিজদা করতে দেখার ঘটনা এসেছে কোরআনে। আল্লাহ বলেন, ‘(এটা সেই সময়ের কথা) যখন ইউসুফ নিজ পিতা (ইয়াকুব আ.)-কে বলেছিল, আব্বাজি, আমি (স্বপ্নযোগে) ১১টি নক্ষত্র এবং সূর্য ও চন্দ্রকে দেখেছি। আমি দেখেছি তারা সবাই আমাকে সিজদা করছে।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৪)
  • ১৫. এমন একদিন আসবে, যেদিন চাঁদ জ্যোতিহীন হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং চাঁদ নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। এবং চাঁদ ও সূর্যকে একত্র করা হবে।’ (সুরা : কিয়ামা, আয়াত : ৮-৯)
https://ift.tt/M5EaALc
বিজ্ঞাপনঃ গৃহ শিক্ষক/শিক্ষিকা দিচ্ছি/নিচ্ছি
বাংলা মিডিয়াম / ইংলিশ মিডিয়াম / ইংলিশ ভার্সন
Play- O & A Level নার্সারী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী সকল বিষয়
PrivateTutorsbd.com
মোবাইলঃ ০১৭৪২-৭৯৬৯৬৯
সমগ্র ঢাকায় শিক্ষক / শিক্ষিকা দেওয়া হয়।
Facebook Page: https://ift.tt/cYAiMd6
Facebook Group: https://ift.tt/qntY6Av
Instagram Id: https://ift.tt/tY0x2nN
LinkedIn Page: https://ift.tt/cznD8Ao
প্রিয় অভিভাবক, ঢাকায় গৃহ শিক্ষিকা/শিক্ষকের প্রয়োজনে এখনই কল দিনঃ ০১৭৪২-৭৯৬৯৬৯ (PrivateTutorsbd.com)

Post a Comment

0 Comments